বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন
চকরিয়া প্রতিবেদক : চকরিয়ার চিংড়িজোনে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকা সরকারী ২৭ টি স্লুইসগেইট জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত চারদিন আগে উপকূলীয় অঞ্চলের একটি জলদস্যু চক্র প্রকাশ্যে চিংড়িজোন এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দায়িত্বরত লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে স্লুইসগেইট গুলো দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একসনা লিজ নিয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে উপকার ভোগী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জবর দখলে নেওয়া স্লুইসগেইট (জলকপাট) গুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শুক্রবার নিলামের মাধ্যমে বহিরাগত লোকজনের মাঝে বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
নিলামের আগে ২৭ টি স্লুইসগেইটের মধ্যে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের একজন ২১টি ও অপরজন ৬টি মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। নিলামে একটি স্লুইস গেইট দুই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে বলে দাবি করেন চিংড়ি ঘেরের চাষীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোনে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ২৪টি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি স্লুইসগেইট (জলকপাট) রয়েছে। এসব স্লুইসগেইট দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ করে আসছেন চাষীরা।
জানা গেছে, স্লুইসগেইট লাগোয়া ২০-২২টি মৎস্য ঘেরের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে পাউবো ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পত্র (একসনা লিজ) নিয়ে প্রতিবছর স্লুইসগেইট গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে বৈধভাবে পরিচালনা করে আসছেন। তাতে এতদিন ঘের মালিক ও স্লুইসগেইট কতৃপক্ষের সঙ্গে কোনধরনের জোটঝামেলা হয়নি। সেই স্লুইসগেইট অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে পাহারারত কর্মচারীদের তাড়িয়ে দখল করেছে।
স্লুইসগেইট গুলোর লাগোয়া ইউনিয়ন সাহারবিল। ঘটনার ব্যাপারে সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এই বিষয়ের সাথে কোনভাবে জড়িত নই। কেউ আমার কথা বললে তা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। স্লুইসগেইট নিলাম নিয়ে আমি কিছুই জানিনা।
এদিকে চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চিংড়িজোনের স্লুইসগেইট গুলো জবরদখল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সভায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চিংড়ি জোনের এসব স্লুইসগেইট আগের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঘের মালিক ও চাষীদের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান তানজিম বলেন, চিংড়িজোনের এসব স্লুইসগেইট স্থানীয় ঘের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পত্র নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কে বা কারা এসব স্লুইসগেইট দখলে নিয়েছে এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী ঘের মালিকরা লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই মৎস্য অধিদপ্তর সরকারি সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, উপজেলার চিংড়িজোনের স্লুইসগেইট গুলো সরকারি সম্পত্তি। যদি কেউ এসব স্লুইসগেইট অবৈধভাবে দখল করে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্লুইসগেইট গুলো রক্ষণাবেক্ষণে কারা কীভাবে কাজ করছেন সেটি জানতে মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এরপর করুনীয় নির্ধারণ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply